শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথাই ছিল না আসাদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
২০০০ সালে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট আল-আসাদ মারা যান। তার মৃত্যুর পর ছোটো ছেলে বাশার আল-আসাদ ৩৪ বছর বয়সে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। সেই সময় তাকে তরুণ এবং সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে দেখা হলেও বিদ্রোহীদের চাপে এবং আন্তর্জাতিক মিত্রদের দুর্বলতায় শেষ পর্যন্ত তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হতে হয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে দামেস্কে জন্মগ্রহণ করা বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের দ্বিতীয় সন্তান। তিনি এক উচ্চবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠেন।

আসাদ সরকার পতনের মাস্টারমাইন্ড, কে এই জোলানি?আসাদ সরকার পতনের মাস্টারমাইন্ড, কে এই জোলানি?
বড় ভাই বাসিল আল-আসাদ ছিলেন পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার। বাশার রাজনীতির বাইরে থেকে লন্ডনে চোখের ডাক্তার হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং মূলত চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

তবে ১৯৯৪ সালে বড় ভাই বাসিলের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর বাশার পরিবারের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন। বাবার নির্দেশে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং রাজনীতির প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।

পালাননি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী, সমর্থন দিলেন বিদ্রোহীদেরপালাননি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী, সমর্থন দিলেন বিদ্রোহীদের
২০০০ সালে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বাশার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। সেই সময় তাকে তরুণ এবং সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে দেখা হয়েছিল। সিরিয়ার জনগণ আশাবাদী ছিলেন, তিনি দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবেন।

কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর বাশার দ্রুতই তার পিতার শাসন কাঠামোকে আরো কঠোর করে তোলেন। রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ এবং সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য তিনি সমালোচিত হন।

মাত্র ১২ দিনে আসাদের ২৪ বছরের শাসনামলের অবসানমাত্র ১২ দিনে আসাদের ২৪ বছরের শাসনামলের অবসান
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছলে, বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মুক্তির দাবিতে সৃষ্ট এই আন্দোলনগুলো বাশারের শাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

তবে, তিনি সংলাপের পরিবর্তে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক অভিযান, বোমাবর্ষণ এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে দেশটি ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে।

গৃহযুদ্ধে লাখো মানুষের মৃত্যু এবং কোটি মানুষের উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য বাশারকে দায়ী করা হয়। তার শাসনব্যবস্থা রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন পেলেও আন্তর্জাতিক মহল তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছে।

দামেস্কের কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারের ফটক খুলে দিল বিদ্রোহীরাদামেস্কের কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারের ফটক খুলে দিল বিদ্রোহীরা
পতনের শুরু ২০২৪ সালে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। আলেপ্পো, হোমস এবং হামার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখল করে তারা বাশারের সেনাবাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রগতির পেছনে আসাদ বাহিনীর দুর্বল প্রতিরোধ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভাজন বড় কারণ। ইরান ও রাশিয়া, যারা এতদিন বাশারকে সমর্থন দিয়ে আসছিল, তারাও সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আর আগ্রহ দেখায়নি।

বিদ্রোহীরা দামেস্ক ঘিরে ফেললে পরিস্থিতি বাশারের জন্য আরও সংকটজনক হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, দামেস্কে বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা শুরু হলে বাশার আল-আসাদ একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে দেশ ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান।

খুব শিগগিরই বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হবে: সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতাখুব শিগগিরই বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হবে: সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতা
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, আসাদের সেনা সদস্যদের সামরিক ইউনিফর্ম খুলে ফেলে পালাতে দেখা গেছে। বিদ্রোহীদের হাতে পতনের আশঙ্কায় সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই নিরাপত্তার জন্য গোপনে দেশ ছেড়ে চলে যান।

যুবরাজ থেকে স্বৈরশাসক হয়ে ওঠার বাশার আল-আসাদের গল্প ক্ষমতা এবং দমননীতির এক দুঃখজনক উদাহরণ। তার শাসনামল সিরিয়ার জনগণের জন্য বিভীষিকা হয়ে দাঁড়ায়। দেশত্যাগের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান হলেও, সিরিয়ার জনগণকে এখনও যুদ্ধের ক্ষত এবং পুনর্গঠনের দীর্ঘ পথে এগোতে হবে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION